পিস্ টিভি রহস্য মুসলমানদের বিভক্ত করা ওহাবী মতবাদের প্রচারক পিস টিভির রহস্য (সংগৃহীত তথ্য কোষ)

ওয়েলকাম! টু দ্যা নজদী ফেতনা!

(ইহুদীদের সাথে শিয়া ও আহলে হাদিসদের [পিস্ টিভি সিন্ডিকেটের] সম্পর্কের গভীরতা এবং ওহাবিসম জানতে )

উদ্দেশ্যঃ

বিগত কয়েক দশক ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইসলাম রিসার্চের নামে বিভিন্ন মিডিয়া; যথা প্রিন্ট, সেটেলাইট ও ইনটারনেটের মাধ্যমে কোরান/হাদিসের নিত্য নতুন অপব্যাখ্যা তৈরী করার মাধ্যমে উগ্রতাকে প্রমোট করা, এবং নানা অজুহাতে আজকের আলেম সমাজকে ঢালাও ভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করার মাধ্যমে সাধারন মানুষকে মূল ধারার ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে, কিন্তু কেন? কারা এসবের মূলে রয়েছে ও বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে? এই স্পর্শকাতর বিষয়টি আপনাদের সামনে ধর্মীয় রাজনীতি ও ইতিহাসের আলোকে তুলে ধরার ছোট্ট একটি প্রয়াশ নিয়েই লিখতে বসা, উপযুক্ত কেউ আমার এই লেখাটি সম্পদন করলে খুশী হব। এই লেখাটি, বর্তমান নজদী ফেতনা থেকে সবাইকে সতর্ক করবে বলে মনে করি।

 ভূমিকাঃ

নাস্তিক, কাফেরদেরকে সহজে চেনা যায়, কিন্তু পিস্ টিভি সিন্ডিকেট ওরফে আহলে হাদিস! ওরফে বাংলা ভাই ওরফে হেজবুত তেহেরী ওরফে বকো হারাম ওরফে আই.এস সন্ত্রাসী ওরফে নজদী ফেতনা ওরফে ওহাবী (এদের বন্ধু হচ্ছে শিয়া ও বুশ গং [ওয়েব:https://goo.gl/OPjhYH ] ও ইহুদী গুন্ডা) এদের সম্পরকে জানা সাধারণ মুসলমানদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য, যদি তারা মুফতী/আলেমদের সাহায্য না নেন। রসুঁনের গোড়া যেমন এক, তেমনি আদর্শিক ভাবে তাদেরও মূল এক। এদের সাথে শিয়া স্বভাবের মিল পাওয়া যায়। ইসলাম নাম দিয়ে এই নতুন মতবাদের উদ্ভব করেন আবদুল ওহাব নজদী, জন্মস্থান নজদ বা বর্তমান রিয়াদ।

খেয়েল করলে দেখবেন, এই মতবাদ নির্ভর বিভিন্ন নামের দলগুলো বর্তমান উঠতি বয়সের তরুন যারা ধর্ম নিয়ে তেমন কিছু জানেনা তাদেরকেই মূল টার্গেট করছে। এদেরকে কৌশলে ব্রেইন ওয়াস করা হচ্ছে নিজ ঘরের ড্রয়িং রুমে চ্যানেলের শেষের দিকে চলতে থাকা পিস্ টিভি ও তাওহীদ প্রকাশনীর মাধ্যমে। এই দলগুলো ইসলামের কোন উপকারের জন্য তৈরী করা হয়নি বরং তৈরী করা হয়েছে সন্ত্রাসী কর্যকলাপ করার মাধ্যামে ইসলামের মর্যাদাহানী করার জন্য; যেনো বিশ্বজনমতের কাছে ইসলাম একটি অশান্তির ধর্ম হিসাবে পরিচিতি পায়। ফলে ইহুদি দোসরদের দ্বারা বিশ্বের কোথাও মুসলমানদের উপর নির্যাতন করলে, যেন এর প্রতিবাদ করতে বিশ্বজনমত যেন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। শেষ জামানার এই নজদের ফেতনা নিয়ে নবীজী(স:) এর হাদিস পর্যন্ত রয়েছে। *১ *২

 নজদী ফেতনার বৃত্তান্তঃ

শিয়াদের ব্যাখ্যাকৃত কোরানের উপর বিশ্বাস রাখা [ওয়েব: https://goo.gl/LPC02u ], টেলিভশনে যাকাত চাওয়া, বিজাতীয় টাই পরিধান করা, কোটি দর্শকদের সামনে অশুদ্ধ ভাষায় কোরান পড়া, হাদিসের তথ্য লুকানো *৩ (যেমনঃ পুরুষের জন্য নামাজের হাদিস কে মেয়েদের বলে চালিয়ে দেয়া), বেপর্দা মেয়ে লোকের পাশে বসা সহ আরো অনেক নিকৃষ্ট ভয়ঙ্কর বিদাত প্রচারকারী ভন্ড ডা: জাকির নায়েক ও এসির নিচে বসে মনগড়া ফতোয়াবাজ*৪ মতিউর রহমান মাদানী গংদের ফেতনা বেশ ভয়ঙ্কর! তারা ইসলামের দাওয়াত নয় বরং দাওয়াত দেন বহু ফেরকায়/দলে বিভক্ত “আহলে হাদিস” ওরফে ওহাবী/নজদী মতবাদের(শিংয়ের)। এরা মূলত ওহাবী মতবাদেরই দাঈ বা প্রচারক। তাদের দেখে অতিবিচলিত বা আর্স্চয্য হওয়ার কিছু নেই। এই প্রথম বিশ্ব যুধ্বের অশুভ প্রেতাত্মাদেরই আবার হয়তো কোন অসৎ উদ্দেশ্যে ৯/১১ এর পর জাগিয়ে তোলা হয়েছে। সহীহ হাদীস মানার নামে মূলত হাদীস অস্বীকার করা এবং এর মাধ্যমে সুন্নতীদের মাঝে বিভেধ সৃষ্টি করাই তাদের মূল লক্ষ্য। তারা এমন সব অবান্তর/বাদাতি কথা বলবে, যেই কথা আপনি কোনদিন শোনেননি।

নজদী ফেতনার মূল সুত্রপাতঃ

১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে ব্রিটিশ/ফ্রান্স উপনিবেশিক শক্তি গুলো ইহুদীদের বুদ্ধিতে হাজার বছর ধরে চলে আসা ইসলামিক খিলাফত(অটোম্যান এম্প্যায়ার বা উসমানীয় খেলাফত) ব্যবস্থাকে মিরজাফর এর মত লোকদের সাহায্যে ভেঙে দেয়/পরাজিত করে ফলে গোটা আরব সম্রাজ্য (মিডল ইস্ট) ব্রিটিশ/ফ্রান্সের অধীনে চলে আসে।

প্রচুর ইহুদী গুপ্তচর এই সময় মুসলিম সম্রাজ্যের পরাজয়ের পিছনে কাজ করে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মি: হেম্পার নামের এক জন বৃটিশ ইহুদী গুপ্তচর, ইনি একটি গোপন পরিবারে *৫ জন্মগ্রহন করেন ও প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের আগে বারো বছর আরবের রাস্তায় রাস্তার আর্কিওলজিস্ট পরিচয় দিয়ে উসমানীয় খেলাফতের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন। উল্লেখ্য যে, হেম্পার তুরস্কের শায়খ আফিন্দীর নিকট ছদ্ধবেশী মুসলমান সেজে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ চর্চা করে ইবনে ওহাব নজদীর একান্ত বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল।

মি: হেম্পারের এই অসামান্য অবদান স্বরনীয় করে রাখার জন্য পশ্চিমারা “লরেন্স অব এ্যারাবিয়া” নামক একটি নয় ঘন্টার অস্কার প্রাপ্ত ছায়াছবিও নির্মান করেন।

প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে উসমানীয় খেলাফত পরাজয়ের পর, এই উপনিবেশিক শক্তি গুলো তাদের শাসন অঞ্চলগুলো ভাগাভাগি করেন ও এই সম্রাজ্যের দেশ গুলোকে শাষন/শোষন করার জন্য প্রত্যেক দেশে(কাতার, কুয়েত, লিবিয়া, মিসর, ইরাক, ইরান, জর্ডান, সৌদি আরব, ওমান ইত্যাদি) তাদের অনুগত বা যারা উসমানীয় খেলাফত উৎখাতে ব্রিটিশ/ফ্রান্স কে সহযোগিতা করেছিল এ জাতীয় লোকদের গর্ভনর বা রাজা হিসেবে নিয়োগ করেন (যেমনঃ আফগানিস্তানের পশ্চিমা অনুগত হামিদ কারজাই এর মত ব্যাক্তিবর্গ)।

এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য থাকে যে, ততকালিন সময় ব্রিটিশ/ফ্রান্স যে কোন রহস্যজনক কারনে ফিলিস্তিনে রাজা বা গভর্ণর নিয়োগ দেয়নি, তবে, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে ততকালিন অটোম্যান সম্রাজ্যর অ্যালাইড জার্মানীর পরাজয়ের পর (১৯৪৫ সাল) বোঝা যায় এই অঞ্চলটি ইহুদীদের জন্য সংরক্ষন করা হচ্ছিল, যা ছিল তাদের অনেক আগেরই বৃহঃত্তর নীল নকশার একটি অংশ মাত্র।

উপনিবেশিক শক্তি গুলো আরব বিশ্বে মুসলমানদের উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য প্রচুর ইন্জিনিয়ারিং করেছে যেমনঃ হেজাজ্ ও নজদ্ এর নাম পাল্টে যথাক্রমে বর্তমান সৌদী আরব ও রিয়াদ রাখা হয়। এমনকি মুসলমানদের ধর্ম ইসলামকেও তারা ইন্জিনিয়ারিং করা থেকে ছাড় দেয়নি, যেমনঃ ভারতবর্ষ শাষন কালে তারা এদেশের আলেমদের কিনতে চেয়েছিলেন, যে সমস্ত আলেমগন ব্রিটিশদের অনুগত হননি তাঁদের শহীদ/নির্যাতন অথবা আন্দামান দ্বীপে জেলে পাঠানো হতো। এবং কাদিয়ানী ও এরকম ভূঁইফোড় মুসলিম(!) দল তৈরী করেছিল মুসলমানদের(সুন্নি) ভাগ করার জন্য। তেমনি ভাবে মধ্য প্রাচ্যে মুহাম্মদ আবদুল ওহাব নজদী এর নিজস্ব মতবাদ "ওহাবীসম" কে সুন্নিদের উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উপনিবেশিক শক্তি এ মতবাদে বিশ্বাসীদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে। ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসীরা মুসলিমদের মুশরিক আখ্যা দিয়ে সমাজে থেকে শিরক/বেদাত নির্মূলের অজুহাতে প্রচুর নির্যতন চালান ও ক্ষমতা পাঁকাপোক্ত করেন।

এছাড়াও পরবর্তীতে তাদের গুপ্তচর ইহুদী এজেন্টবৃন্দ / বিক্রি হয়ে যাওয়া বুদ্ধিজীবি! টাইপের লোকজন দিয়ে হাদিস/কোরানের আয়াতের বিকৃত ব্যাখ্যা/টিকা/অনুবাদের বই (উগ্রতা ও এমনকি শিয়াদের বিশ্বাস থেকেও) লিখে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এসবি করা হয় মুসিলমদের মূল ধারা থেকে শিয়া/কাদিয়ানিদের মতো আরেকটি উপদল বের করে মুসলমানদের সমাজ কে ক্ষন্ডিত করার উদ্দ্যেশ্যে।

প্রসংগত, সে আমলেই নাসিরুদ্দিন আলবানী রহঃ (জন্ম ১৯১৪ সাল আলবেনীয়া– মৃত্যু ১৯৯৯ সাল জর্ডান - পেশায় ঘড়ী মেকার), যিনি কোন জামেয়া/ভার্সিটিতে লেখাপড়া করেননি অথবা ব্যাক্তগত ভাবে যুগীয় কোন মুহাদ্দিসের কাছে ইলমে হাদিস শিখেননি। তিনি প্রায় চৌদ্দশত বছর পর পূর্ববর্তী জগৎখ্যাত মুহাদ্দীসগনের (তাবেঈন সহ) অত্যান্ত কঠোর ও নিষ্ঠার সাথে যাচাই/বাছাই ও সংগ্রীহিত, বিশুদ্ধ, সার্বজনীন স্বীকৃত, অথেনটিক প্রধান প্রধান হাদিস গ্রন্থ সমুহ যেমনঃ মুসলিম/ সুনানে আবু দাউদ/ তিরমিজি/ বুখারী শরীফ ইত্যাদি সংশোধন(!) করার অজুহাতে তার স্বভাব বিরোধী বহু হাদিসকে ফেলে দিয়েছেন যদিও হাদীস গ্রহণের ক্ষেত্রে তার সুপ্রমাণিত কোন সনদ নেই। তিনি স্বপ্রনোদিত ভাবে নতুন করে হাদিস সমুহের তার স্বভাব নির্ভর বেপরোয়া ব্যাখ্যাও প্রদান করেন। *১১

নিজের মত প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যয়ীফ হাদিসকে সহীহ ও সহীহ হাদিসকে যয়ীফ বলেছেন; এমনকি নিজ কিতাবেই একটি হাদীসকে সহীহ বলেছেন, অন্য কোথাও সেটিকে আবার যয়ীফ বলে চালিয়ে দিয়েছেন, অসংখ্য হাদীসের ক্ষেত্রে তিনি এ ধরণের স্ববিরোধীতার আশ্রয় নিয়েছেন, যা অত্যান্ত অস্বাভাবিক। অথচ ডাঃ জাকির নায়েক শায়খ নাসীরুদ্দিন আলবানী কে তার বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস মনে করে থাকেন।*১১

এই সব পুনঃসংকলন গুলো করতে গিয়ে তিনি পূর্ববর্তী হাদিস সংকলক জগৎখ্যাত মুহাদ্দীসগনকে(তাবেঈন সহ) এক দিকে তিরস্কার করেন, আবার হাদীস প্রিয়তার নামে সমস্ত মুহাদ্দিসদের উস্তাদ সাজেন তিনি।*৬ অর্থাৎ নাসীরুদ্দিন আলবানীর অধিকাংশ মুহাদ্দিসের হাদীসের সমালোচনা করার মূল উদ্দেশ্য হল, মানুষ যেন আবশ্যকভাবে তাঁকে ইমাম বানায় এবং তাঁর অন্ধ অনুকরণ করে। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আলবানীকে জিজ্ঞেস না করবে এবং তার বিশ্লেষণকে গ্রহণ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অন্য কোন বিশ্বস্ত ও গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী মুহাদ্দিসগনের হাদীসের উপরও যেন নির্ভর না করে।

 যে কারনে হাজার বছরের পূর্ববতী তাবেয়ীগনের সংকলনের সাথে মত বিরোধের সুচনা হয়।

তাছাড়াও তার এই পুনঃ সংকলিত গ্রন্থ গুলোর নামকরন তিনি তার নামেই করতে পারতেন বা করা উচিত ছিল বলে মনে করি, যেমনঃ “আলবানী শরীফ” নাম দিতে পারতেন, কারন তিনিই এই গ্রন্থের সংকলক। তা না করে পূর্ববর্তী আলেমদের নামেই কেবল নামের সামনে “সহীহ” শব্দ সংযোজন করে নামকরণ করেন, যেমন, “সহীহ বোখারী শরীফ” বা “সহীহ আবু দাউদ শরীফ”। এরকম আসলটির সাথে মিল রেখে নামকরনের ফলে নানা প্রকার বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এতে ফেকাহ্ শাস্ত্রে বা সায়েন্সে অজ্ঞ ব্যাক্তি কোনখানে হাদিসের রেফারেন্স দেখে বুঝেন এটা ইমাম বুখারীর অথবা আবু দাউদের সংকলিত বিশুদ্ধ হাদিস শরিফের কিন্তু ভালভাবে খুজলে হয়তো দেখা যাবে ওই রেফারেন্স আলবানীর পুনঃসংকলিত গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে।

ফলে সাধারন মুসলমানরা ইমাম বোখারীর বোখারী শরীফ, সুনানে আবু দাউদ সহ অন্যান অথন্টিক, বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ সমুহ বাদ দিয়ে আলবানীর সম্পাদিত আন-অথেনটিক, সার্বজনীন স্বীকৃতি না পাওয়া এসব গ্রন্থগুলোর মানতে শুরু করেন, শুধু তাই না আসল হাদিস গ্রন্থের হাদিস গুলোকে মিথ্যা বা জাল জানতেও শুরু করেন। তিনি অন্যান আরো যে সমস্ত হাদিস গ্রন্থের সংকলন বের করেননি, তাদের বেশীর ভাগ গ্রন্থের হাদিস গুলোকে অস্বীকার করা হয় অথবা গুরত্ব দেয়া হয় না। তবে ইনি শেষের দিকে নিজেই নিজের কাজের বেশ কিছু সংশোধনী দিয়ে যেতে সম্মত হয়ে ছিলেন। ইমাম বোখারী (রহ:) বলেন, “বোখারী শরীফের বাইরে আমার এক লক্ষ সহীহ হাদীস মুখস্ত রয়েছে।” *৮

এখানে উল্লেখ্য থাকে যে, চৌদ্দশত বছর পর, তিনি যে সময় এই পুনঃ সংকলন! ও যাচাই বাছাই এর কাজ আরবে বসে করছিলেন, ঐ সময় ব্রিটিশ/ইহুদীদরা সমগ্র আরবের মুসলিম সমাজে প্রভাব বিস্তার করছিল, তাই উনার এই পুনঃসংকলন! ও হাদিস যাচাই/বাছাই ব্রিটিশ প্রভাব মুক্ত বলা যাবেনা। উনার এই সমস্ত কাজ, নাপিত দিয়ে ডাক্তারী করানোর মতো, কারন উনার উক্ত বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। এই তথাকথিত যাচাই/বাছাই দ্বারা মুসলমানদের হাদিস গুলোকে তথা মুসলমান জাতিকে সে সময় দুই ভাগেভাগ করার মত বৃথা হীন চেষ্টা করা হয়।

এখানে বলে রাখাভাল যে, ফেকাহ্ শাস্ত্রে বা সায়েন্সে বিভিন্ন প্রকার হাদিস রয়েছে। হাদিসের সংজ্ঞা, রাবীর সংখ্যা, রাবী বাদ পড়া, সনদ, রাবীর গুণ ইত্যাদি অনুযায়ী হাদিস কে শ্রেণীভুক্ত করা হয়। যেমন: হাসান, মুরসাল, মাওকুফ, সহীহ, যঈফ/দূর্বল, মুত্তাসিল... ইত্যাদি। শুধু সহীহ হাদিস মানতে বা আমাল করতে হবে বাকি প্রকারের হাদিস গুলো মানা বা আমাল করা যাবে না ব্যাপারটি এমন নয়। বাকি অন্যান প্রকারের হাদিস গুলো না মানলে পরিস্কার গুনাহগার হতে হবে এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টিকারী বলে গন্য হতে হবে। আর মিথ্যা, জাল, কৃত্রিম, ভুল, অসত্য কোন হাদিসের আমাল বা গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে তো কোন প্রশ্নই আসে না। *৭

মূলত গ্রন্থের নামের শুরুতে এই নতুন “সহীহ” শব্দটি কৌশলে ব্যাবহার করে সুন্নী মুসলমানদের মধ্যে একটি ফেতনা সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হয়। আমাদের বুঝতে হবে, যথা: “বোখারী শরীফ” ইমাম বোখারী(র:) ও “সহি বোখারী শরীফ” নাসিরুদ্দিন আলবানী সম্পাদনা করেছেন, তারা দুই জন আলাদা ও তাদের সংকলিত/সম্পাদিত গ্রন্থও পৃথক পৃথক।

তার এই কাজ ততকালীন মুসলিম জ্ঞানী সমাজে ব্যাপক সমালোচিত হয়।
যেমনঃ

১. শায়খ সাইদ আল মামদুহ আলবানী সাহেব একটি হাদীসকে তিনি সহীহ বলেছেন, বাস্তবে সেটি যয়ীফ, এজাতীয় আট'শ হাদীসের উপর আলোচনা করেছেন।

২. শায়খ হাম্মাদ বিন হাসান আল-মিসরী ৩০০ 'শ এর বেশি রাবীর জীবনী আলোচনা করেছেন, যাদের ব্যাপারে আলবানী সাহেব বলেছেন, তাদের কোন জীবনী কোন কিতাবে পাইনি অথবা তারা অপরিচিত।

৩. উদা বিন হাসান উদা এই কিতাবে যে ৫০০ হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে, আলবানী সাহেব পূর্বে একটা হাদীসকে সহীহ বলেছেন, পরে মত পরিবর্তন করে সেটাকে যয়ীফ বলেছেন।

৪. আলবানী সাহেব এতো বেশি পরিমাণ স্ববিরোধীতা করেছেন যে, এ বিষয়ে তিনি অনেক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। একজন সুস্থ ধারার মুহাদ্দিস দু'একটি হাদীসের ক্ষেত্রে এমন করতে পারেন, কিন্তু তিনি শত শত হাদীসের ক্ষেত্রে এধরণের স্ববিরোধতিা করেছেন। শায়খ হাসান বিন আলী আস-সাক্কাফ আলবানী সাহেবের এ ধরণের স্ববিরোধীতার উপর কিতাব লিখেছেন।

৫. মুফতী বিন(রহ:) বায বলেন- আলবানী সাহেব ছহীহ হাদীস সমূহের বিরোধিতাকারী।

ফেতনার চেইনঃ

ইহুদীরা জন্ম থেকেই ইসলামের শত্রু। তারা ইসলামকে দূর্বল করার জন্য ইহুদী আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা কে দিয়ে শিয়া মতবাদের সৃষ্টি করে, যা ইসলাম ধর্ম থেকে বিচ্যুত একটি বিশ্বাস/মতবাদ/শিং। তারাও নামাজ/রোজা করে কিন্তু তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য হচ্ছে বিশ্বাসে, যেমনঃ শিয়াদের কালিম শরীফ হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মাদুর রাসুলুল্লাহ আলী ওয়ালী উল্লাহ” কালিমা শরীফ নিয়ে তাদের বক্তব্য হলো, “আলী ওয়ালী উল্লাহ ব্যতীত কালিমা তাইয়্যিবা মিথ্যা” *১২

ইহুদি সৃষ্ট শিয়াদের এসব বিশ্বাস কে পুঁজি করে শিয়া মতাবিলম্বী ওহীদুজ্জামান (পরে সুন্নি পরে আলে হাদিস, বির্তকিত!) এর মতো লোকজন দিয়ে ভারতবর্ষে ওহাবী মতবাদের আরেক ভার্সন আহলে হাদিস নামক দল তৈরী করে। এই আহলে হাদিসদের মতবাদের সাথে শিয়াদের মতবাদের অনেক সদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়, যেমনঃ ইজমা কিয়াস/মাজহাব/ফিক্বহকে অস্বিকার, সাহাবীরা ফাসিক, নেকায়ে মুতা জায়েজ, শ্বাশুরীর সাথে জিনা করলে স্ত্রী হারাম হবে না, শুকরের অঙ্গ বিশেষ পবিত্র, কুকুর পাক।*১২ এমনকি ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ “হে আল্লাহ কিয়ামতের দিন আমাদের হাশর আলীর শিয়াদের সাথে করিও”। “আহলে হাদীস হল আলীর শিয়া”। *১২

ততকালিন সময় সামান্য পরিবর্তন করে মূলত শিয়া মতবাদ নির্ভর বিভিন্ন নামের দল/উপদল তৈরি করা হয়। এ যেনো বাহারি নামের মোড়কে একি খাবার। এখানে, সুস্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়, ইহুদীদের থেকে সৃষ্ট ফেতনাগুলো একটির থেকে অপরটির উদ্ভব করা হয়, এরা ধারাবাহিক ভাবে একটি ঐতিহাসিক চেইনও রক্ষা করে, যার মূল কাজই হলো ইসলামের ধংস।

ইহুদীরা মুসলমানদের ক্ষতি করার জন্য সবসময় বিভিন্ন অদ্ভুত কর্যকলাপে নিযুক্ত থাকে। যেমনঃ তারা সুন্নীদের মাঝ থেকে ছোট ছোট উগ্র দল তৈরী করে আবার মুক্তচিন্তার নামে তাদেরই নাস্তিক বন্ধুদের দিয়ে ইসলামের কুৎসা করে কুরুচীপূর্ণ কার্টুন প্রকাশ করে। আবার, তাদেরই ওহাবী বন্ধুদের বলবে, তারা যেন ব্রেন ওয়াস করা তাদের গুটিকয় উগ্র সদস্য দিয়ে নাস্তিকদের কুকর্মের জন্য একটি উচিত শিক্ষা দেয়। ব্যাস এটুকুই, তার পরের ফলাফল দেখুন...

ফলাফলঃ সুন্নী নিধনঃ এই গুটিকয় নাস্তিকদের উপর আক্রমন এর নিউজ ইহুদি মিডিয়া তথা সি.এন.এন – বি.বি.সি তে তারা সারা বিশ্বে প্রচার করে বিশ্বজনমত তৈরী করে মুসলমানদের(সুন্নী)বিরুদ্ধে, আর কিছুদিনের মধ্যেই তাদের দোসর শিয়াদের সাথে নিয়ে সুন্নী অধ্যুষিত দেশগুলোর সুন্নীদের উপর ঢালাও ভাবে নির্যাতন করা, এসব এখন নীল নকশা এখন ওপেন সেক্রেট হয়ে দাড়িয়েছে! (এটা আমার নিজস্ব মতামত, এক মত নাও হতে পারেন!)

আমাদের করণীয়ঃ

উপনিবেশিক শক্তিদের দ্বারা সৃষ্ট্য এই সমস্ত উগ্রপন্থী “আহলে হাদিস”, “পিচ টিভি সিন্ডিকেট”, টাইপের তৈরী করা ফাঁদে বা সুমিষ্ট কথায় পা না দেয়া ও বাপ/ দাদার ধর্ম ট্রাডিসনাল(সুন্নাহ্) ইসলামে অবিচল থাকা। আলেম সমাজ আছে বলেই আমাদের সমাজে এখনো শান্তি ও ঐক্য আছে, তারা সবসময় বেদাতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন ও করে চলছেন, তারা আমাদের অবিভাবক সরূপ। আহলে হাদিস, পিচ টিভি সিন্ডিকেট এর কথায় তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে মুসলিম উম্মাহ্ ফেতনার মুখে পরবে তাই আমাদের উচিত উপযুক্ত আলেম /মুফতী সাহেবদের সৎসর্গে থাকা ও শান্তির ইসলাম এ থেকে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা ও সৃষ্টির সেবা করা।

আল্লাহ্ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

(এই লেখাটি, দ্বীন ইসলামের স্বার্থে ও নজদী ফেতনা থেকে সবাইকে সতর্ক করতে ভাই/বন্ধুদের মাঝে প্রচার করুন।)

তথ্যসূত্রঃ

ওহাবীদের পিছনে বুস গং, ওয়েব:https://goo.gl/OPjhYH 
পবিত্র কোরানের ভুল অনুবাদ, ওয়েব:https://goo.gl/LPC02u 
ওয়েব: https://goo.gl/OMdFWE
ওয়েব: http://goo.gl/1xdmbL
ওয়েব: http://goo.gl/lSj0iY
ওয়েব: http://goo.gl/l9zADw
ওয়েব:http://www.masud.co.uk/ISLAM/misc/najd.htm

*১. রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এরশাদ ফরমান, “এয়া আল্লাহ! আমাদের সিরিয়া (শাম) ও আমাদের ইয়েমেনদেশে বরকত দিন।“ সাহাবা-এ-কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আরয করেন, “আমাদের নজদ অঞ্চলের জন্যেও (দোয়া করুন)?” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা আবার দোয়া করেন, “এয়া আল্লাহ! আমাদের শাম ও ইয়েমেনদেশে বরকত দিন।“ সাহাবা-এ-কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আবারও আরয করেন, “আমাদের নজদ অঞ্চলের জন্যেও (দোয়া করুন)?” তৃতীয়বারে আমার (ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) মনে হলো তিনি বললেন, “ওখানে রয়েছে ভূমিকম্পসমূহ ও নানা ফিতনা (বিবাদ-বিসংবাদ), এবং সেখান থেকে উদিত হবে শয়তানের শিং (কারনুশ্ শয়তান)”।“

*২. হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার বিদায়ের পর পূর্ব দেশগুলির মধ্যে (নজদ) হতে আমার উম্মতের ভিতরে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগন হবে অশিক্ষিত এবং মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহুগুনের ফযীলতের। তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলবে। তাদের আমলগুলো খুবই নিখুত ও সুন্দর মনে হবে । তাদের নামাজের তুলনায় তোমাদের নামাজকে তুচ্ছ মনে করবে,তাদের রোজা দেখে তোমরা তোমাদের রোজাকে তুচ্ছ ও নগন্য মনে করবে । তাদের আমল দেখে তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে। তারা কুরআন শরীফ পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবে না (বোধগম্য হবে না বা অন্তর/কলবে পোঁওছাবে না। (তাই প্রকৃতভাবে) তারা কুরআনের উপর আমল বা কুরআন প্রতিষ্ঠার কোন চেষ্টাও করবে না। এদের আমল তোমাদের যতই আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনোই এদের দলে যাবে না। কারন প্রকৃতপক্ষে এরা ইসলাম থেকে খারীজ(বাতিল), দ্বীন হতে বহির্ভূত । তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায়,সে আর কখনো ধনুকের নিকট ফিরে আসে না। তেমনি এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে,আর কখনো দ্বীনের পথে, কুরআন সুন্নাহর পথে ফিরে আসবে না।“

দলীল- বুখরী শরীফের অন্যতম ব্যাখ্যাকার ইমাম হাজর আস্কালানী(রহ: ) : শরহ বুখারী ফতহুল বারী ১২ তম খন্ড ৩৫০ পৃষ্ঠা ।
মিশকাত শরীফের প্রসিদ্ধ ব্যাক্ষ্যাকার মোল্লা আলী কারী(রহ ) : মিরকাত শরহে মিশকাত ৭ম খন্ড ১০৭ পৃষ্ঠা ।

*৩ পুরুষের জন্য নামাজের হাদিস কে মেয়েদের বলে চালিয়ে দেয়া, ওয়েব:https://goo.gl/9aFaWZ 

*৪ একবার নিজের পক্ষের দলিলকে সঠিক সাব্যস্ত করতে গিয়ে মুরসাল হাদীস নিলেন কিন্তু অন্য ব্যপারে মুরসাল হাদীস কে যয়ীফ বানিয়ে দিলেন, ওয়েব: https://goo.gl/WAL1QT 
মতিউর মাদানী পযালোচনা, ওয়েব:https://goo.gl/W9twRr

*৫ গুপ্তচরের গোপন পরিবারে জন্মগ্রহন, ওয়েব:https://goo.gl/vJR39i 

*৬ ইমাম বোখারী (রহঃ) কে অমুসলিম আখ্যায়িত করা- "এ ধরণের ব্যাখ্যা কোন মুমিন-মুসলমান দিতে পারে না। তিনি বলেন, এ ধরণের ব্যাখ্যা মূলতঃ কুফরী মতবাদ তাতীলের অন্তর্ভূক্ত, ওয়েব: http://goo.gl/dJ8QFu

*৭ ফেকাহ্ শাস্ত্রে বা সায়েন্সে বিভিন্ন প্রকার হাদিস রয়েছে, ওয়েব: http://goo.gl/CBKlA8 
যঈফ হাদীসের গ্রহণযোগ্যতা, ওয়েব:http://goo.gl/CbKjwC 
ইবনে তাইমিয়ার দৃষ্টিতে যঈফ হাদীসের উপর আমল করা জায়িয ও মুস্তাহাব, ওয়েব:http://goo.gl/hUPbMB 

*৮ (আল-কামিল, ইবনে আদী ১/১২৬, তারীখে বাগদাদ, খতীব বাগদাদী ২/৮-৯, শুরুতি আইম্মাতিল খামসা, হাযেমী ১৬০,১৮৫)

*১১ আলবানী সাহেবের আসল চেহারা, ওয়েব:https://goo.gl/FyWGbm
নাসিরুদ্দিন আলবানী সম্পর্কে কিছু চমৎকার তথ্য, ওয়েব: https://goo.gl/Ntii9X
নাসিরুদ্দীন আলবানী আলেম, ওয়েব:https://goo.gl/ch9uxc
ঐ সমস্ত হাদিস যা নাসিরুদ্দিন আলবানী রহঃ আগে জঈফ বলেছেন পরে সহীহ বলেছেন, ওয়েব: https://goo.gl/5V2fBe

*১২ শিয়াদের কুফরী আকিদা, ওয়েব: https://goo.gl/lhjLXD
শিয়াদের কুফরী বিশ্বাস সমূহ, ওয়েব: http://goo.gl/ddPFBJ
ওরা আহলে হাদীস না শিয়া, ওয়েব: https://goo.gl/iAHYsN
Ahle Hadees ki Haqeeqat, ওয়েব:https://goo.gl/Zyrm8i
শিয়াদের আজান, ওয়েব:https://goo.gl/fz1r5P
শিয়া প্রিতি, ওয়েব: https://goo.gl/YZxA2X

লেখকঃ

ডা: ফখরুল ইসলাম

কপিরাইটঃ

দ্বীন ইসলামের স্বার্থে প্রচার করুন।

উৎসর্গঃ

সাধারন মুসলমানগনের (সুন্নী) জন্যই এই লেখা উৎসর্গ করা হলো।

Comments