বাদ্যযন্ত্র সহকারে সকল প্রকার গান বাজনা হারাম

প্রসঙ্গ: ছামা/আধ্যাতিক গান

আল্লাহর প্রেমমূলক সঙ্গীতকে 'ছামা' বলে অভিহিত করা হয়।হামদ (আল্লাহর স্তুতি) না'ত (হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,র প্রশস্তি),গযল (আল্লাহর প্রেমমূলক গান), মুরশিদী (পীর-মুরশিদের প্রশংসামূলক সংগীত),আধ্যাতিক সংগীত,দেশপ্রেমমূলক সংগীত প্রভৃতিকে ছামা বা বিশুদ্ধ সংগীতের পর্যায়ভূক্ত করা হয়ে থাকে।উপরিউক্ত ছামাসমূহ শুনা মুবাহ (বৈধ)।এ ছাড়া পৃথিবীর সর্বপ্রথম গানবাদ্য হারাম।ছামা বা আধ্যাতিক সংগীত দ্বারা সূফীগণ নিজ অন্তরে আধ্যাতিক অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলেন এবং আল্লাহর ধ্যানে নিবিষ্ট হন।ছামা এর শ্রবণকারীকে আধ্যাতিক রাজ্যে টেনে নিয়ে যায় এবং মূহূর্তে সাধকের মনে আধ্যাতিক ভাব জাগিয়ে তোলেন।ছামা প্রকৃত শ্রবণকারীকে জজবার (ভাবন্মোদনা) পর্যায়ে নিয়ে যায়।তাই চিশতিয়া ও মৌলভীয়া তরীকার সূফিগণ কিছু শর্ত সাপেক্ষে ছামা শ্রবণকে বৈধ বলে মত দিয়েছেন।
ইমামে আহলে সুন্নাত,মূজাদ্দীদে দীঁনো মিল্লাত,আ'লা হযরত শাহ আহমদ রেযা খাঁন ফাদ্বেলে বেরেলভী (কুদ্দিছা ছিররুহুল আযীয) কিছু শর্তসাপেক্ষে ছামা এর বৈধতার উপর মত প্রদান করেছেন।তিঁনি হযরত মাহবুবে ইলাহি নিযামুদ্দীন আউলিয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -এর উদ্বৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, ছামা বৈধ হওয়ার জন্য নিন্মুক্ত শর্তগুলো অপরিহার্য...:-
১. যিনি 'ছামা' বলবেন,তিনি পূর্ণবয়স্ক হতে হবেন।মহিলা বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে হলে চলবে না।
২. 'ছামা' আল্লাহ-রাসূলের মহব্বত বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে হতে হবে।অর্থাৎ, ছামা শ্রবণকারী আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হতে পারবে না।
৩. যা 'ছামা' হিসেবে আবৃতি করা হবে তা মন্দ অযথা উপহাসমুক্ত হতে হবে।
৪.ছামার অনুষ্ঠান বাদ্যযন্ত্র মুক্ত হবে।

(মাকালু উরাফা,পৃ. ৩৮)

সুতরাং, সূফীগণের উদ্ভাবিত 'ছামা' মাহফিল এর সাথে আজকের যুগের ছামা বা কাউয়ালীর দূরতমও সম্পর্ক নেই। ইমাম আহমদ রেযা (রহ.) আরো বলেন, "শুধু কাউয়ালী করা যায়েজ আছে।আর বাদ্যযন্ত্র হারাম।এ ব্যাপারে চিশতিয়া তরিকতপন্থীদের মধ্যে বেশী বাড়াবাড়ি দেখা যায়।অথচ সুলতানুল মাশায়েখ মাহবূবে ইলাহী (রহ.) "ফাওয়ায়েদুল ফুয়াদ" শরীফে বলেছেন, বাদ্যযন্ত্র হারাম।হযরত শরফুল মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন ইয়াহিয়া মুনীরী (রহ.) বাদ্যযন্ত্রকে ব্যাভিচারের সাথে তুলনা করেছেন।

(আহকামে শরীয়ত,পৃ. ১৪৮)

আমাদের দেশে উরশের নামে আজ যেভাবে বাদ্য-বাজনা,নাচ-গান,নারী-পূরুষের অবাধ মেলামেশা চলছে তা যেমন গর্হিত কাজ তেমনি দ্বীন ইসলামের সাথে ঠাট্টা বিদ্রুপের শামিল।
এ বিষয়ে ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরেলভী (রহ.) বে-আমল মিথ্যুক সূফীদের স্বরূপ উন্মোচন করতেও দ্বিধা করেন নি।

আ'লা হযরত (রহ.) লিখেছেন, "কোন কোন মূর্খ,মন্দ ধরনের মাতালা,আধা মোল্লা,প্রবৃত্তি পূজারী কিংবা ভন্ড সুফী এ ব্যাপারে তৎপর যে,তারা সহীহ,মরফূ ও মুহকাম হাদীস শরীফের মুকাবেলায় কোন কোন দূর্বল কিসসা কিংবা সন্দেহপূর্ণ ঘটনা অথবা অস্পষ্ট অর্থবোধক বিষয়াদি পেশ করে থাকে।তাদের এতটুকু বিবেক নেই কিংবা সেচ্ছায় বিবেকহীন সেজে বসে আছে।বস্তুত সহীহের সামনে দূর্বল,সন্দেহমুক্ত এর সামনে সন্দেহযুক্ত,মুহকাম এর সামনে মুতাশাবিহ কে পরিহার করা ওয়াজিব।.... আহা! তারা যদি গুনাহকে গুনাহ বলে জানতো!স্বীকার করতো! এ হঠকারিতা আরো জঘন্য যে,উচ্চাবিলাশকেও লালন করবে,অপবাদও প্রতিহত করবে! নিজের জন্য হারামকে হালাল বানাবে।শুধু তা নয়,বরং আল্লাহর পানাহ! এর অপবাদ আল্লাহর মাহবুব বান্দাগণ ও চিশতিয়া তরীকার শীর্ষস্থানীয় বুজূর্গগণের উপর আরোপ করে, না আল্লাহকে ভয় করে,না বান্দাদের সামনে লজ্জাবোধ করে।...
অথচ খোদ হুযূর মাহবুবে ইলাহীর খলিফা শায়খ ফখরুদ্দীন যারাভী (রহ.) খোদ মাহবূবে ইলাইহী (রহ)'র নির্দেশে ছামার মাসয়ালায় একটি কিতাব "কাশফুল কানা আন উসুলিস ছামা" লিখেছেন।
তাতে তিঁনি পরিস্কারভাবে লিখেছেন, আমাদের মাশায়েখ কেরাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম) -এর ছামা ওই বাদ্যযন্ত্রের অপবাদ থেকে পবিত্র।তাতো নিছক কাউয়ালের আওয়াজ মাত্র ওইসব শ্লোক সহকারে যেগুলো আল্লাহর শিল্পকর্ম সম্পর্কে খবর দেয়।
আল্লাহর ওয়াস্তে ইনসাফ করুন (!) খান্দানে চিশতিয়ার ওই মহান ইমামের এ এরশাদ গ্রহনযোগ্য হবে,নাকী আজ-কালকার ওই সব লোকের ভিত্তিহীন অপবাদ ও প্রকাশ্য ফ্যাসাদ।

(ইমাম আহমদ রেযা: আহকামে শরীয়ত,পৃষ্ঠা-৬১)
..... (চলবে)

Comments